রাতের ফ্লাইটগুলোকে আমার বড্ড অদ্ভুত লাগে। সিট বেল্ট বাঁধা, সব লাইট বন্ধ, মোবাইলে ফ্লাইট মুড,জানালা দিয়ে অন্ধকারের মাঝে বিমানবন্দরের লাল, কম...
রাতের ফ্লাইটগুলোকে আমার বড্ড অদ্ভুত লাগে। সিট বেল্ট বাঁধা, সব লাইট বন্ধ, মোবাইলে
ফ্লাইট মুড,জানালা দিয়ে অন্ধকারের মাঝে বিমানবন্দরের লাল, কমলা, সবুজ বাতি। তার
পাশ ঘেসে ঝিক ঝিক করছে বিমানের পাখার সাথে লাগানো বাতিটা। মাটির সাথে সব যোগাযোগ
বন্ধ। মনে হয় রওনা দিচ্ছি অন্তহীন কোন অজানায়। আস্তে আস্তে করে উড়ুক্কু যন্ত্রটা
রেডি হচ্ছে তার পরম ঝাঁপের উদ্দেশ্যে। সবটুকু বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকতে হয় আকাশ পানে
উড়ার, যদিও দিনের বেলায়ও এটা সত্যি, বাট অন্ধকার যেন এক সময়ের অসাধ্য আর অকল্পনীয়
যাত্রাগুলো স্মরন করিয়ে দেয়। একটু অসংগতিই নামিয়ে আনতে পারে হাজার হাজার ফুট নিয়ে
অন্ধকারে দুমড়ানোর মুহুর্ত।
এরপর হুট করেই প্লেনের প্রচন্ড গতিতে ছুটে চলা মুহুর্ত এবং খানিকবাদেরই ভরশূন্যতার আবহ
নিয়ে শুন্যে উড়তে শুরু করা। বন্ধ হয়ে যাওয়া কান এবং বার বার ঢোক গিলে রক্ষা,
চারদিকে ছোট হয়ে যাওয়া ঘুমন্ত অথচ আলোকিত স্টোকহোম শহর, রাতভর পড়তে থাকা তাজা
তুষার আর মৃতের মত স্টান হয়ে দাড়িয়ে থাকা ন্যাড়া গাছগুলো। এরপর হুট করেই কাঁপতে
কাঁপতে কাছের মেঘগুলোর মধ্যে ঢুকে যাওয়া এবং খানিকবাদে সব ছাড়িয়ে আরো উপরে উঠে
যাওয়া। অন্ধকারে চারদিকের তারকাগুলো আরো স্পষ্ট হয়ে উঠা আর হুট করে মনের মধ্যে
তারকাগুলো ছোঁয়ার অতৃপ্ত বেদনা জেঁকে বসা।
যাইহোক এর মাঝে ডানপাশের জন ঘুমিয়ে গিয়েছে এবং
অন্যজন তার ল্যাপটপে বিভিন্ন কোষের মাইক্রোস্পিক অবস্থা দেখে এখন লাল রংয়ের কিছু
একটা সেলাই করছে নিবিষ্ট মনে। অবাকই হলাম কিছুটা। যদিও জানতাম ঐতিহ্যগতভাবে
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মত সেলাই নারীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় স্ক্যানডেনেভিয়াতেও
কিন্তু আমি ভাবতাম সাধারনত তা হয়তো বয়স্কদের মধ্যেই, পাশের তরুণীটির মত কম বয়সী
কারো এমন শখ থাকতে পারে আধুনিক এই সময়ে তা ভাবি নি। আমার কাছে মনে হয় দেশের অথবা
একাডেমিক এক্সট্রিম নারীবাদীদের কাছে এই আধুনিক মেয়েটাও পশ্চাৎপদ হয়ে যাবে কারণ সে
নারীদের পুরোণো একটা ট্রাডিশন ফলো করছে।
(১ম পর্ব)
চলবে
২৭ শে নভেম্বর ২০২২
স্টকহোম থেকে কোপেনহেগেন।
COMMENTS